প্রশ্ন
মুমিন বান্দার মৃত্যুর পর কী কী বিষয় ঘটে? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত একটি হাদিস রয়েছে। সে হাদিসের ১ম অংশে মুমিন বান্দার মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বলা হয়েছে। নিম্নে হাদিসটির হুবহু অর্থ উল্লেখ করা হল।
হযরত বারা ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন আমরা নবী করিম (সা.) এর সঙ্গে এক আনসারী লোকের জানাযায় বের হয়েছি। আমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছলাম,কিন্তু তখনও কবর খোঁড়া হয়নি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বসে গেলেন এবং আমরাও তাঁর চারপাশে এমনভাবে বসে গেলাম যেন আমাদের মাথায় পাখি বসে আছে। তখন তাঁর হাতে একটি কাঠের টুকরা ছিল যা দিয়ে তিনি মাটিতে দাগ কাটছিলেন। এরপর তিনি মাথা তুললেন এবং বললেন, তোমরা আল্লাহর তাআলার কাছে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও। কথাটি তিনি দুবার বা তিনবার বললেন।
এরপর বললেন,মুমিন বান্দা যখন দুনিয়াকে বিদায় দিয়ে আখিরাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট একদল ফেরেশতা আসমান থেকে তার কাছে আসেন, যাদের চেহারা সূর্যের মত। তাদের সঙ্গে বেহেশতের কাফনসমূহের একটি কাফন থাকে। বেহেশতের সুগন্ধিগুলোর একটি তাদের সঙ্গে থাকে। তারা সে ব্যক্তি থেকে দৃষ্টির দূরত্ব পরিমাণ দূরে অবস্থান করেন।
এরপর মৃত্যুর ফেরেশতা (আযরাঈল আ.) আসেন। তিনি তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন,হে পবিত্র আত্মা! বের হয়ে এসো আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে। রাসূল (সা.) বলেন, তখন তার রূহ বের হয়ে আসে যেমনিভাবে মশক থেকে পানি বের হয়ে আসে। তখন মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে গ্রহণ করেন এবং এক মুহূর্তের জন্যেও ঐ ফেরেশতাগণ তাকে মৃত্যুর ফেরেশতার হাতে থাকতে দেন না;বরং তারা নিজেরাই তাকে গ্রহণ করেন এবং তাকে ঐ কাফনের কাপড় ও ঐ সুগন্ধির মাঝে রাখেন। ফলে তার থেকে পৃথিবীর বুকে প্রাপ্ত সকল সুগন্ধির চেয়ে উত্তম মেশকের সুগন্ধ বের হতে থাকে।
রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, তাকে নিয়ে ফেরেশতাগণ উপরে উঠতে থাকেন আর যখনই তারা ফেরেশতাদের মধ্যে কোনো ফেরেশতাদলের নিকট পৌঁছেন তারা জিজ্ঞাসা করেন,এ পবিত্র রূহটি কার? তখন মানুষ দুনিয়াতে যেসব উপাধি দ্বারা ভূষিত করত সেসবের সর্বোত্তমটি দ্বারা ভূষিত করে ফেরেশতাগণ বলেন এ হচ্ছে অমুকের ছেলে অমুকের রূহ।
এভাবে তাঁরা প্রথম আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যান। অতপর তারা আসমানের দরোজা খুলতে বলেন, অমনি তাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয়। তখন প্রত্যেক আসমানের সম্মানিত ফেরেশতাগণ তার পরবর্তী আসমান পর্যন্ত বিদায় সম্ভাষণ জানান। এভাবে তাকে নিয়ে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দার ঠিকানা তোমরা ইল্লিয়্যীনে লিখ এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। কেননা আমি তাদেরকে জমিন থেকে সৃষ্টি করেছি এবং জমিনের দিকেই তাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করব। অতপর জমিন থেকে তাদেরকে আবার বের করে আনব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,সুতরাং তার রূহ আবার তার দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
অতপর তার কাছে দুজন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার রব কে? তখন সে জবাব দেয়, আমার রব হচ্ছেন আল্লাহ। অতপর জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দ্বীন কী? তখন সে বলে, আমার দ্বীন হলো ইসলাম। তারা আবার তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের কাছে যে লোকটি প্রেরিত হয়েছেন তিনি কে? সে উত্তরে বলে, তিনি আল্লাহ তাআলার রাসূল (সা.)। তারা তাকে আবারো জিজ্ঞাসা করেন, তুমি এসব কীভাবে জানতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহ তাআলার কিতাব পড়েছি, তার উপর ঈমান এনেছি এবং তাকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আসমানের দিকে একজন আহ্বানকারী ডেকে বলবে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্যে একটি বেহেশতী বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে একটি বেহেশতী পোশাক পরিয়ে দাও, আর তার জন্যে বেহেশতের দিকে একটি দরোজা খুলে দাও।
রাসূল (সা.) বলেন, তখন তার দিকে বেহেশতের সুখ-শান্তি ও বেহেশতের সুঘ্রাণ আসতে থাকে এবং তার জন্যে তার কবরকে তার দৃষ্টিসীমার দূরত্ব পরিমাণ প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতপর তার নিকট একজন সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট সুবেশী ও সুগন্ধিযুক্ত ব্যক্তি আসে এবং তাকে বলে, তোমাকে সন্তুষ্ট করবে এমন বিষয়ের সুসংবাদ গ্রহণ করো। এ হচ্ছে ঐ দিন যে দিনের ব্যাপারে তোমার সঙ্গে ওয়াদা করা হয়েছিল। তখন সে ওই লোককে জিজ্ঞাসা করবে, তুমি কে? তোমার চেহারা তো এমন চেহারা যা কল্যাণ বয়ে আনে। তখন সে বলে, আমি তোমার নেক আমল। তখন সে বলবে, হে আল্লাহ! কিয়ামত কায়েম কর! হে আল্লাহ! কেয়ামত কায়েম কর! যাতে আমি আমার পরিবার ও সম্পদের দিকে যেতে পারি।
[মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদিস: ১৬৩০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৮৫৩৪]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم